বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামে খুলে বসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অবৈধ ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবল নিয়োগ বন্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত সোমবার একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী পরিচালক পদবি ব্যবহারকারী আব্দুল মান্নান সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।বগুড়ায় জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নেকটার) সাবেক পরিচালক আব্দুল মান্নান সরকার প্রায় তিন বছর আগে ২০১৭ সালে বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেন। শুরুতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সচিব এবং অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু নামের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়। তার মৃত্যুর পর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মজিবর রহমান মজনুকে চেয়ারম্যান করা হয়।
প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার প্রতিটিতে একটি করে এবং যশোর, ঝিনাইদহ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ খুলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের বিপরীতে আব্দুল মান্নান বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বগুড়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মান্নান সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন জেলার ১২টি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১২ জন অধ্যক্ষ এবং সভাপতি।তাদের পক্ষে বগুড়া সদরে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আব্দুল মান্নান সরকার শুরুতে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিব পরিচয় দিলেও পরবর্তী সময়ে তিনি স্বঘোষিত ‘নির্বাহী পরিচালক’ হয়ে যান। এরপর তিনি অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সব ক্ষমতা নিজ হাতে নেন এবং তার পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই তিনি বগুড়া জেলার বাইরেও শতাধিক প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমোদন দেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নিয়োগ-বাণিজ্যের পাশাপাশি আব্দুল মান্নান সরকার প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত এবং পরিচালনা পরিষদকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও অধ্যক্ষ পদে রদবদল আনেন।সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মান্নান সরকারের কর্মকাণ্ডে সরকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে উল্লেখ করা বলা হয়, বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান মজনুকে অনুরোধ করেন। কিন্তু আব্দুল মান্নান সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনুর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোও উপেক্ষা করে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দেন। সংবাদ সম্মেলনে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল মান্নান সরকারসহ তার সহযোগীদের বিচারও দাবি করা হয়।এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, আব্দুল মান্নান সরকার নিজেকে ‘নির্বাহী পরিচালক’ ঘোষণা দিয়ে বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করে জনবল নিয়োগ করছে এবং এর ফলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে মর্মে জানা যায়। এ অবস্থায় অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক নিয়োগ বন্ধ করাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, ‘কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেখানে তদন্তের কথাও বলা হয়েছে। আমিও চাই তদন্ত হোক। প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসুক।’
সূত্রঃ এডুকেশন বাংলা