পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে বয়স বাড়ালেও শিক্ষার্থীদের তেমন সাড়া মেলেনি। চলতি বছর প্রথম ধাপে প্রায় ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। আর গত বছর মোট আবেদনকারী ছিল ৮৯ হাজার। আবেদনকারীদের মধ্যে ৪২ বছর বয়সী একজন আছেন। অপেক্ষাকৃত ‘অধিক বয়সী’ ভর্তিচ্ছু ৯৮০ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি ৬ শতাধিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আছে। এর মধ্যে শতাধিক সরকারি পলিটেকনিক এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানে আসন আছে প্রায় ৫৫ হাজার। গত বছর এর মধ্যে ৫ হাজার আসন শূন্য ছিল। শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং বিদেশ ফেরত দক্ষ শ্রমিকদের ডিপ্লোমা সনদে ভূষিত করতে সরকার এ বছর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে বয়সের বিধিনিষেধ তুলে দেয়। সেই হিসাবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবে। গত বছর পর্যন্ত ভর্তি সালের আগের দু’বছর এসএসসি উত্তীর্ণরা সরকারি এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর আগে এসএসসি উত্তীর্ণরা বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারত।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, সারা বিশ্বেই কারিগরি শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের বয়সের কোনো বিধিনিষেধ নেই। সেই ধারণা থেকে এবার এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ বা ভর্তি বৃদ্ধি করা। এ বছর বিষয়টি তেমন জানাজানি হয়নি। আগামী দিনে হয়তো শিক্ষার্থী বাড়বে। আর এ নিয়ে যদি জটিলতা তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি পুনর্চিন্তার পথ রুদ্ধ থাকছে না।
৯ আগস্ট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির আবেদন নেয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, প্রথম ধাপে দুই শিফট (প্রভাতি এবং বৈকালিক) মিলিয়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার আবেদন পড়েছে। কেউ কেউ উভয় শিফটে আবেদন করেছে। এতে মোট আবেদনকারী পাওয়া গেছে প্রায় ৮৮ হাজার। দ্বিতীয় ধাপে গত দু’দিনে আরও ১৭শ’ আবেদন পড়েছে।
উল্লেখ্য, ভর্তিতে বয়সের বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় কারিগরি শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, নীতিমালা তৈরির আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আসন শূন্য থাকার বিষয়টি আমলে নিয়ে এবং বিদেশ ফেরতদের সনদায়নে এই পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবে বিষয়টি যথাযথ হয়নি। কেননা আসন শূন্য থাকার বেশকিছু কারণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে- ইলেকট্রো মেডিকেল, এনভায়রনমেন্ট, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য আইপিসিটি, মাইনিং, টেক্সটাইল, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আসন শূন্য থাকছে। এছাড়া মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোয়ও প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
বয়স বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে আন্দোলনরত বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যেসব বিভাগের চাহিদা আছে সেগুলোর কোনোটিতে পদ শূন্য থাকছে না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভেঙে ইলেকট্রো মেডিকেল এবং এনভায়রনমেন্ট করা হয়েছে। একই জিনিস পড়ানো হয়, কিন্তু চাকরির সার্কুলারে চাওয়া হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা। ফলে উল্লিখিত দুই বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা নিয়োগবঞ্চিত হচ্ছে। থাকছে বেকার। এসব দেখেই অনেকে এই শিক্ষায় আসছে না। ফলে পদ শূন্য থাকছে।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষায় জড়িতদের দাবি ছিল যে, সর্বোচ্চ ৫ বছর আগে এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এতে একই ক্লাসরুমে কাছাকাছি বয়সের শিক্ষার্থীরা বসবে। বয়স্করা ক্লাসরুমে যুক্ত হলে কম বয়সীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। কিন্তু এই দাবি আমলে নেয়া হয়নি। অন্যদিকে বয়সের বাধা তুলে দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি। নাম প্রকাশ না করে কারিগরি বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম ধাপে যে ৮৮ হাজার আবেদন পড়েছে, তাদের মধ্যে ‘বেশি বয়সের’ শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৯৮০ জন। এরা ২০১৫ বা এর আগে এসএসসি উত্তীর্ণ। একজন পাওয়া গেছে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এই শিক্ষার্থী ফরিদপুরের এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে আবেদন করেছেন। তার বয়স ৪২ বছর। প্রথম ধাপের আবেদনের পর দেখা গেছে- খুলনা, রাজশাহী এবং ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে অনেক আসন খালি আছে। আসনের তুলনায় আবেদনকারী কম হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভর্তিতে বাধা তুলে দেয়ার প্রতিবাদকারী সংগঠনের মধ্যে আরেকটি ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)। সংগঠনটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, বর্তমানে ৪৫টি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয়ার ব্যবস্থা আছে দেশে। ডিগ্রি দেয়া হলেও চাকরির বাজারে পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বাস্তবে বাজারে কিন্তু চাহিদা আছে। যেমন- হাসপাতালে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলো মেরামত করবেন ইলেকট্রো মেডিকেল বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা। কিন্তু কোনো হাসপাতালে এই পদ সৃষ্টি হয়নি। ফলে একদিকে গ্র্যাজুয়েটের চাকরি হচ্ছে না, আরেকদিকে যন্ত্র নষ্ট হলে পড়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষায় সরকারের বিনিয়োগ বাড়ছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বাড়াতে পারছে না সরকার। অন্যদিকে এর আগে স্টেপ নামে একটি প্রকল্প থেকে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটকে উন্নয়নের জন্য ৯ কোটি টাকা করে অনুদান দিয়েছিল সরকার। এছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এসব কাজে এসেছে কি না, সেই মূল্যায়ন হয়নি। এছাড়া প্রকল্পটিতে উত্থাপিত দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত কমিটির কাজও শেষ হয়নি।
বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের উদ্যোক্তাদের সংগঠন টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশের (টেকবিডি) সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল আজিজ যুগান্তরকে বলেন, কারিগরি শিক্ষায় কিছু মৌলিক প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলোর মধ্যে আছে ৪ বছরের কোর্স। এটি সর্বোচ্চ ৩ বছর করতে হবে। পাশাপাশি এটা এইচএসসি সমমান করতে হবে। তাহলে যে কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। অথবা তাদের জন্য ২ বছরের গ্র্যাজুয়েশন রাখা যায়। কিংবা স্নাতক মর্যাদাসহ ৫ বছরের কোর্স করতে হবে। তাহলে ভর্তি বেড়ে যাবে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাবরেটরি-ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতি নিশ্চিত, ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা, চাকরির বাজারে টেকনোলজি ধরে পদ সৃষ্টি করতে হবে। নইলে কোনো দিন শিক্ষার্থী বাড়বে না।
সূত্রঃ যুগান্তর
Prochar hoyni ty emon hoyese.
Online a admission neyar system den. Boyoshkoder online porar sujog din. Tara lojjay ba kazer jonne ashte pareni. Ba jara kaj Jane tader exam er madhome certificate deya hok. Tobe tara ashtepare.
কারিগরী শিক্ষা সচিব কি করে বলেন,অন্যনন্য দেশে কারিগরী শিক্ষায় ভর্তির কোন বয়স নেই,ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং একটি নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমএটা তো প্রশিক্ষন কর্মসূচি নয়। একজন অনিয়মিতশিক্ষার্থীভর্তি হলে, তার সরকারী চাকরী বয়সপার হলে তাকে কি তিনি সরকারী চাকরী দিতে পারবেন? তাছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ এখন বিএসসিইঞ্জিনিয়ারিংপড়ে পিএইচডি ডিগ্রী পর্যন্ত নিচ্ছেন, বয়সের বার তুলে দিলে কি করে তাদের সামাল দেবেন সচিব কি বলতে পারবেন? সমস্যার সমাধানে না গিয়ে এসব সচিবেরা আরো সমসঢার জন্ম দিচ্ছে,আর কারিগরী শিক্ষারবারোটা বাজিয়ে দেশকে পিছিয়ে নেবার কাজে সহযোগিতা করছে!