জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন সোনালী কাল অতিক্রম করছে। ১৬ কোটি ৫৭ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে জনসংখ্যা আজ সুযোগ হিসাবে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। যা কোন জাতির জীবনে কয়েকশ বছরে একবার আসে। ১৫-৫৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের জন্য উৎপাদনক্ষম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে এ জনগোষ্ঠী ৬৮%। এ জনমিতি লভ্যাংশ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করা হয়। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার উপর। এটিকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর,জাপান,চীন,মালয়েশিয়া,দক্ষিন কোরিয়া আজ উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রযুক্তি নির্ভর ও প্রতিযোগিতামুলক শিক্ষা আমাদের জন্য অবধারিত। দক্ষ জনশক্তির অভাবে আমাদের দেশের কর্মসংস্থানের অনেক জায়গা বিদেশিরা দখল করে আছে, ফলে আমাদের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে ।গুণগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে এসব জায়গায় আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। উন্নত দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশের জন্য প্রয়োজন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। লোকের কাজ নেই,কাজের লোক নেই এই ধারা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। প্রথাগত চাকুরি খোঁজার ছক থেকে বের হয়ে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক। আশার কথা হচ্ছে, চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এলএনজি টার্মিনাল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পরিকল্পিত বহুমুখী বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দেশজুড়ে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই একের পর এক মেগা প্রকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। সমুদ্র উপকূলীয় ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে গড়ে উঠছে সম্ভাবনার বাংলাদেশ। সেখানে শুরু হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার একর আয়তনবিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পূর্ণাঙ্গ রূপ নিলে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের। মিরসরাইয়ের অংশে ২ হাজার ১০০ ও সোনাগাজীর অংশে ৮ হাজার একর ভূমির ওপর শিল্পাঞ্চল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এসব উন্নয়ন কার্যক্রমকে চালিয়ে নেয়া গেলে ব্যাপক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন আউটসোর্সিং বিশ্বব্যাপী শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয় পেশা। বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এ খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এ খাতে তরুনদের আরও অধিক পরিমানে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মনোজগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানের গতানুগতিক পদ্ধতিতে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মহাকাশ বিজ্ঞান ,কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবকে মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল। প্রযুক্তির ট্রেন মিস করলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। বর্তমানে প্রযুক্তি মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। সমাজে নতুন আচার ব্যবহার ও সংস্কৃতি প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মতামত, ধারণা, আদর্শ ও দর্শন সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষকে অনেক অজানাকে জানার এবং অতীতের চেয়ে অনেক বেশি নিজেদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রযুক্তি ছাড়া মানুষ, মানুষ ছাড়া প্রযুক্তি কোনটিই একটি দেশের সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেনা। উভয়ের সংমিশ্রণে মানবিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব। প্রত্যাশা করা হয়, যদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা যায় তবে পোশাক শিল্প খাতের রপ্তানিকেও অতিক্রম করে একটি বহুমুখী রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার রফতানি আয়। অর্থাৎ এ খাত থেকে ৪০ গুণের বেশি রফতানি আয় হতে পারে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশর মতো উন্নয়শীল দেশে অবকাঠামো একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন দুর্বলতা এখনও প্রকট। এ খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়াতে হবে। সেই সাথে স্মরণ রাখতে হবে প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার বন্ধ না করা গেলে ভবিষ্যতে রোবটিক যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের স্থবিরতার বড় কারণ হলো অবকাঠামোগত সমস্যা,ঋণের প্রাপ্যতার অভাব, ঋণের উচ্চ সুদের হার, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং অর্থনৈতিক নীতির সংস্কারের অভাব।এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত। গ্রামকে কৃষি বিপ্লবের ক্ষেত্র বানাতে হবে। এ দেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পে রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। খাদ্য পক্রিয়াজাত শিল্পে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ রয়েছে। লবনসহিষ্ণু জিন আবিষ্কার সম্ভব হলে শুধু বাংলাদেশের কৃষিতে নয়, ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বিশ্ব কৃষিতে। এ ক্ষেত্রে কৃষি গবেষণায় অধিক মনোনিবেশ করতে হবে।
আমাদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন শ্রম বাজার সার্ভে করা ও প্রথাগত শিক্ষার বাইরে বৃত্তিমুলক শিক্ষায় প্রকৃত অর্থে নজর দেয়া অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানো। কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। নতুন শ্রম বাজার খুজতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকায় জনশক্তি রপ্তানি করতে হবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর পর ২০৪০ সালের দিকে স্বাস্থ্য খাত হবে বিনিয়োগ ও কর্ম সংস্থানের অন্যতম খাত। নারীদের জন্য দেশ-বিদেশে মিড ওয়াইফ হবে সম্ভাবনার এক খাত। জনমিতি লভ্যাংশের বিরল এ সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে, পরিকল্পনা ও বাস্তবের মেল বন্ধনের মাধ্যমে মানবিক ও প্রযুক্তিগত প্রগতির সমন্বয়ে সুন্