জি. এম. তাজউদ্দিন : শিক্ষা বিশ্বাসের বীজ বপন করে, বিশ্বাস আশার বীজ বপন করে, আশা শান্তির বীজ বপন করে। আর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যাক্তি ও জাতিকে করে স্বনির্ভর। দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হচ্ছে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন মানবসম্পদ । সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাপক বেকারত্বের বিপরীতে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠি রূপান্তরিত হয় জনশক্তিতে। দেশ-বিদেশের বিশাল শ্রমবাজারে প্রয়োজন দক্ষ শ্রমশক্তি। অদক্ষ, আধা-দক্ষ শ্রমিক এর কারণে বাংলাদেশ হারাচ্ছে বিপুল সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা গুলো এ দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনশক্তিতে রূপান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার এ সেক্টরের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট National Skill Development Council (NSDC)। ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার এনরোলমেন্ট ২০% এ উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর হাতে নিয়েছে ব্যাপক কর্মসূচী।
দেশে বিদ্যমান ৪৯ টি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ৬৪ টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ১ টি ভোকেশানাল টির্চাস ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, ৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ১ টি ডিগ্রী পর্যায়ের টেকনিক্যাল টির্চাস ট্রেনিং কলেজের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কার্যক্রমকে বেগবান করা হয়েছে। ছাত্রদের সরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি, ছাত্রীদের শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান ও ফ্যাক্টরি কনসেপ্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গৃহীত হয়ছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে লক্ষ্যে কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রামের আওতায় সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার কার্যক্রমও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসুচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। চাকুরী বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে ইমার্জিং টেকনোলজি প্রবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জব ফেয়ারের আয়োজন, জব প্লেসমেন্ট সেল স্থাপন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর,অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সুইডেন, জার্মান, ইতালি, কানাডা, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের সাথে কারিগরি জ্ঞান বিনিময়, স্কলারশিপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।
তদুপরি ১০০ টি উপজেলায় ১ টি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ছাত্রদের এনরোলমেন্ট বৃদ্ধিকল্পে অবকাঠামো উন্নয়ন; চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন; সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ টি মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন; ২৩ টি জেলায় ১ টি করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন; বাংলাদেশ ভুমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন; ৮ টি বিভাগীয় সদরে ৮ টি মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন; উপজেলা পর্যায়ে ৩৮৯ টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন; বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন; ৬৪ টি জেলায় দক্ষ জনবল তৈরী করার লক্ষ্যে RPL সেন্টার স্থাপন এর মতো বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রীন প্র্যাকটিস, শেরপা বাস্তবায়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন ও ধারন এর মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করার অবিরাম চেষ্টা চলছে।
গৃহীত ও বাস্তবায়িত এসব কার্যক্রম বাংলাদেশেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছে। প্রতিযোগিতাময় বিশ্ব বাজারে টিকে থাকা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষা গ্রহনের মানসিকতা পরিহার করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি শিক্ষা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই নির্মিত হবে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।
লেখক : জি. এম. তাজউদ্দিন, শিক্ষক, ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।