১৯০৮ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে (বর্তমান বুয়েট) তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষার সুচনা হয়। বর্তমানে ৪৯ টি সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ১ টি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ৬৪ টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং প্রায় ৪৫০ টি বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে এছাড়া রয়েছে ৭ টি সরকারী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, প্রায় ১৩০ টি বেসরকারী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, ৬ টি সরকারী মেরিন ইনস্টিটিউট ও বেশকিছু বেসরকারী মেরিন ইনস্টিটিউট ।
এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ১ লক্ষ ২০ হাজার স্টুডেন্ট ৩৫ টি টেকনোলজির উপর চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ডিগ্রী গ্রহন করছে। কিন্তু অধিকাংশ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এরপরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। কারন ১ লক্ষ ২০ হাজার ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর জন্য বাংলাদেশে সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র দুই টি উচ্চশিক্ষা, এর মাঝে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এ ৬৫০ টি এবং বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বিটেক) এ ১২০ টি আসন আছে। যেখানে মোট ৭৭০ জন অর্থাৎ ০.৬৪% ডিপ্লোমা প্রকৌশলী উচ্চশিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পেয়ে থাকে।
এদিকে কয়েক টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আবেদনের সুযোগ দিলেও এইচএসসি সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কারনে অল্প কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হবার সুযোগ পায়। বিভাগ ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা গ্রহনের বিষয় পর্যালোচনা করলে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ। দেশে প্রায় ৩৫ টি টেকনোলজিতে কারিগরি শিক্ষায় ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেয়ার সুযোগ থাকলেও ডুয়েট ও বিটেকে আছে মাত্র ৮ টি বিভাগ, ফলে বেশিরভাগ সময় এক বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করে অন্য বিষয়ে বিএসসি করতে হচ্ছে। যেমন কেমিক্যাল নিয়ে ডিপ্লোমা করলেও ডুয়েটে এই বিভাগ না থাকায় মেকানিক্যাল কিংবা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করতে হচ্ছে।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করা আরিফ হাসান শাওন বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে এখন বিএসসির জন্য ডুয়েট ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ডিগ্রির ওপর উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগও নেই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বিভাগে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় এইচএসসি পাস শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। এইচএসসির সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাই এখানে চান্স পাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদ’র, সাধারন সম্পাদক, মোঃ রুহুল আমিন লেমন, বলেন উচ্চশিক্ষার জন্য ডুয়েট ছাড়া প্রধানত সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নামমাত্র শিক্ষা দিয়েই গলা কাটা ফি আদায় করা হয়। মেকানিক্যালে উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র দুটিতে পড়াশোনা করানো হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই।
অপরদিকে সরকার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না বাড়িয়ে ডিপ্লোমা পর্যায়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্টান বানানো উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাঝে আছে ২৩ টি সরকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৪ টি সরকারী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৮ টি সরকারী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। এছাড়া পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন দিগুন করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। একই সাথে বেসরকারী পর্যায়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন চলছে। সব মিলিয়ে ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩ লক্ষ স্টুডেন্ট ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করা হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। কিন্তু এই সকল স্টুডেন্টের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর জোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। জায়গা সংকটের জন্য ডুয়েটে বড় পরিসরে আসন বাড়ানো সম্ভব না। বাংলাদেশের ছোট ক্যাম্পাস গুলোর মাঝে ডুয়েট একটি। বিভিন্ন সময় এই সংকট সমাধান চেয়ে সরকারের কাছ আবেদন করা হলেও তা অজানা করনে বাস্তবায়ন হয় নি।
দেশে নতুন করে ৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করার পরিকল্পনা করছে সরকার, এর মাঝে ২ টি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের জন্য বরাদ্দ রাখার হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে জানিয়েছেন জনাব মিজানুর রহমান, ডাইরেক্টর (অতিরিক্ত সচিব) ডাইরেক্টরেট অব টেকনিক্যাল এডুকেশন, যদিও এই বিষয়ে সংশিষ্ট বিভাগ থেকে কিছু আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয় নি।
প্রায় ১২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সর্বোচ্চ ৩ টি বিভাগে ১৮০ জন ভর্তি করা হয়। এর ফলে ২ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দিয়ে অল্প কিছু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে আরো ৮ টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪ টি টেক্সটাইল কলেজ করার উদ্যোগ নিলেও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করার কোন উদ্যোগ নেয় নি। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে ডিপ্লোমা প্রকোশলীদের উচ্চশিক্ষার যে সমস্যা আছে তা সমানের দিন গুলোতে আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবে বলে ধারনা করা যায়।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সকল স্তরের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও ছাত্রশিক্ষক গন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি ।